আপনি যত ফিট থাকবেন আপনার নিরোগ থাকার সম্ভাবনা তত বেশি । শারীরিক ফিটনেস রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। বয়স বাড়লে যে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া, হাড়ক্ষয়, হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে, তা ঠেকাতে চাই ফিটনেস। দীর্ঘদিন সচল ও কর্মক্ষম থাকার জন্যও ফিটনেস জরুরি।
আপনি শারিরীকভাবে ফিট কি না তা পরিমাপ করার জন্য পাঁচটি বিষয়ে খেয়াল করতে পারেন। যদি কোনোটিতে ঘাটতি থাকে তবে তা উন্নতির জন্য চেষ্টা করতে হবে। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে-
ব্যালান্স
আপনি কি এক মিনিটের জন্য আপনার এক পায়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন? যদি উত্তর না হয় তবে আপনাকে এর জন্য চেষ্টা করতে হবে। শরীরের একটি বিশেষ ব্যায়ামের সময় পতন রোধ করার ক্ষমতা এবং সহায়তার জন্য মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্র বজায় রাখাকে ব্যালান্স বলা হয়। এটি দিনে বেশ কয়েকটি ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যালেন্স কীভাবে উন্নত করবেন : সমস্ত শরীরচর্চা যা আপনার শরীরকে শক্তিশালী করে এবং ব্যালান্স উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। উঁচুতে হাঁটার চেষ্টা করুন এবং বডিওয়েট ব্যায়াম করুন।
স্ট্রেন্থ
স্ট্রেন্থ ট্রেনিং আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম করার ক্ষমতা উন্নত করে। পেশী শক্তিশালী থাকলে তা জয়েন্টগুলোকে আঘাত থেকে রক্ষা করতে পারে। বিশেষ করে ভারী বস্তু উত্তোলনের সময়ও কষ্ট হয় না। এটি আরো ভালো ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে। পাশাপাশি এটি শরীরের গঠন উন্নত করে।কিভাবে স্ট্রেন্থ উন্নত করা যায় : বডিওয়েট ব্যায়াম করা এবং ওজন উত্তোলন পেশী শক্তি বাড়ানোর সর্বোত্তম উপায়। এছাড়া পাহাড়ে হাঁটা এবং সাইকেল চালানো কিছুটা হলেও সাহায্য করে।
স্ট্যামিনা
স্ট্যামিনা হলো বাড়তি কাজ করার মানসিক এবং শারীরিক ক্ষমতা। এটি ক্লান্ত না হয়ে কাজ করার ক্ষমতা এবং কাজের শেষেও নিজেকে শক্তিশালী বোধ করাকে বোঝায়। খেলাধুলা করার এবং ম্যারাথন দৌড়ের সময় পারফরম্যান্সের সঙ্গে আপোষ না করে পুরো খেলা বা দৌড় সম্পূর্ণ করার জন্য স্ট্যামিনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবার খেয়াল করে দেখুন, আপনার স্ট্যামিনা কতটুকু?
কীভাবে স্ট্যামিনা উন্নত করবেন : স্ট্যামিনা তৈরি করতে যেকোনো ব্যায়াম করার সময় আপনার বিশ্রাম নেয়ার সময় সীমিত করুন। পুনরাবৃত্তির সংখ্যা বাড়ান এবং আপনার ব্যায়ামের তীব্রতা বাড়ান।
ফ্লেক্সিবিলিটি
ফ্লেক্সিবল হওয়া শারীরিকভাবে ফিট থাকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি পেশীর গতির বিস্তৃত পরিধিতে চলাচলের ক্ষমতাকে বোঝায়। ফ্লেক্সিবল হলে তা আপনার ক্ষতি না করে সহজেই আপনার প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করতে সহায়তা করে। যদিও আমাদের ফ্লেক্সিবিলিটি বয়সের সঙ্গেসঙ্গে পরিবর্তিত হয়, তবে ব্যায়াম একটি বড় পার্থক্য এনে দিতে পারে।
ফ্লেক্সিবিলিটি কীভাবে উন্নত করবেন : যোগব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং ব্যায়ামের মাধ্যমে ফ্লেক্সিবিলিটি সহজেই বাড়ানো যায়। এই ব্যায়ামগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে পেশী এবং জয়েন্টগুলোকে ধরে রাখার কৌশলটি আপনার গতিশীলতা এবং গতির পরিসর বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
পোশ্চার
এটি আপনার ব্যক্তিত্বকে উন্নত করতে সাহায্য করে এবং হাড় এবং জয়েন্টগুলোকে সর্বোত্তম সারিবদ্ধতায় রাখে। এটি পেশী এবং লিগামেন্টের টিয়ার এবং ডাউন হ্রাস করে। ঝিম ধরা, হাঁটু ও কনুই লক হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হলো অস্বাস্থ্যকর পোশ্চার। এগুলো বাত, অস্টিওপরোসিস এবং জরায়ুর ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়।
কীভাবে উন্নত করবেন : আপনার পোশ্চার বা অঙ্গবিন্যাস উন্নত করতে যোগব্যায়াম এবং স্ট্রেন্থ ট্রেনিং করুন। এছাড়াও হাঁটার সময় এবং বসার সময় আপনার পোশ্চারের দিকে মনোযোগ দিন।
ফিটনেস ধরে রাখার কিছু কৌশল
১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়স্ক সুস্থ ও শারীরিকভাবে ফিট মানুষের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি গতিতে বা ৭৫ মিনিট জোর গতিতে অ্যারোবিক ব্যায়াম করা দরকার। সপ্তাহে ২-৩ দিন করতে হবে পেশিশক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম। অ্যারোবিক ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো, স্কিপিং, সাঁতার কাটা ইত্যাদি। পার্কে বা রাস্তায় যেতে না পারলে ট্রেডমিল বা ছাদে হাঁটুন, স্পট জগিং করুন, স্পট স্কিপিং করুন বা স্ট্যাটিক সাইকেল চালান।
সাধ্যমতো জোরে হাঁটলে হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুসের বেশি উপকার হয়। টানা ২০-৩০ মিনিট হাঁটতে হবে। টানা না পারলে সকালে ২০ মিনিট ও বিকেলে ২০ মিনিট হাঁটবেন। এমন গতিতে হাঁটতে হবে যেন শরীর ঘেমে যায়। হাঁটু-কোমর-গোড়ালির অবস্থা দেখে নেবেন। হৃদ্যন্ত্র-ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কম থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যারোবিক ব্যায়াম করুন। তবে হাঁটা বা জগিংয়ের আগে ভালো মানের হাঁটার জুতো পরে নেবেন। না হলে পায়ে ব্যথা হতে পারে।
স্ট্রেচিং কীভাবে করতে হয়, তা কমবেশি সবাই জানেন। বিশেষ কিছু নয়, শরীরের প্রতিটি পেশিসন্ধিকে সচল রাখার জন্য এই ব্যায়াম খুবই উপকারী। পেশি জোরদার করার ব্যায়াম দুভাবে করা যায়। ওজন নিয়ে ও শরীরের ওজন ব্যবহার করে। বিভিন্ন রকমের স্কোয়াটিং আছে, লেগ রাইজিং, প্ল্যাঙ্ক, পুশ-আপ ইত্যাদি উপায়ে এসব ব্যায়াম করা যায়। তবে বয়স্ক বা ক্রনিক অসুখ আছে বা ফিটনেস কম কিংবা হাঁটু-কোমরের ব্যথা আছে, এমন মানুষের পক্ষে অভ্যাস না থাকলে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ইদানীং কয়েকটি নতুন ধরনের ব্যায়ামের ধারা চালু হয়েছে। এসবে সুরের তালে তালে অ্যারোবিকের সঙ্গে স্ট্রেচিং, ব্যালেন্সিং, স্ট্রেংথ ট্রেনিং—সব করা যায়।
জুম্বা করতে পারেন। তবে বয়স কম ও ফিটনেস বেশি থাকলে তবেই। ফিটনেস ভালো থাকলে বেশি বয়সেও এ ব্যায়াম করা যায়। এ ব্যায়ামে শরীর-মন দুটোই ভালো থাকে।
ইয়োগা করতে পারেন। এটা সব বয়সী মানুষই করতে পারেন।
আমাদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি, মানসিকভাবে সুস্থ থাকাও খুব জরুরি। মেডিটেশনের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যায়।
বেশির ভাগ সময় সচল থাকার চেষ্টা করুন। এক জায়গায় টানা বসে না থেকে কিছুক্ষণ পরপর উঠে দাঁড়ান, হাঁটাহাঁটি করুন। প্রয়োজনে হালকা ব্যায়ামও করতে পারেন।
এভাবে শারিরীক ব্যায়াম ও অন্যান্য কাজের মাধ্যমে আপনি নিজেকে ফিট রাখার অভ্যাস করলে সহজেই আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। কাজেই সুস্থ ও ফিট থাকতে স্বাস্থ্যকর খাবার খান, ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন।