প্রেজেন্টেশনের যত কৌশল
বর্তমানে শিক্ষার্থী কিংবা পেশাজীবী সবাইকেই প্রেজেন্টেশন দিতে হয়। ভালো প্রেজেন্টেশন দেওয়ার দক্ষতা খুবই প্রয়োজনীয় একটি গুণ। অন্য সব দক্ষতার মত প্রেজেন্টেশন দেওয়ার দক্ষতাও হুট করে অর্জন করা সম্ভব নয়। কৌশল অনুসরণ ও নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে কাঙ্ক্ষিত প্রেজেন্টেশনের দক্ষতা।
স্থান কাল পাত্রভেদে প্রেজেন্টেশন বিভিন্ন ধরনের হয় একাডেমিক আলোচনার প্রেজেন্টেশন এক রকম হবে আবার করপোরেট মিটিংয়ের প্রেজেন্টেশন আরেক রকমের হবে। একাডেমিক আলোচনার প্রেজেন্টেশনে তথ্য, উপাত্ত আর্টিকেল, জার্নালের রেফারেন্স ইত্যাদি সংযুক্ত করা খুবই সাধারণ ব্যাপার হলেও করপোরেট মিটিংয়ের প্রেজেন্টেশনে এ ধরনের তথ্য প্রত্যাশিত নয়। প্রেজেন্টেশন তৈরির সময় অবশ্যই শ্রোতার আগ্রহের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে আপনাকে।
প্রেজেন্টেশনের হাতেখড়ি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হলেও কর্মজীবনের প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই প্রেজেন্টেশনের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। একটি চমৎকার প্রেজেনটেশন উপস্থাপন করতে হলে অনেক গুলো বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়।
তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৩টি ধাপ হচ্ছে – প্ল্যানিং করা, তারপর সেই অনুযায়ী প্রেজেন্টেশন স্লাইড তৈরী করা এবং সবশেষে সবার সামনে উপস্থাপন করা।
অনেক সময় দেখা যায় প্রজেন্টেশনের শুরুতে কিংবা শেষে; কিছু না কিছু বিষয় ভূল হয়ে যায়। যেসকল বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখলে সুন্দরভাবে একটি প্রেজেন্টেশন সবার সামনে উপস্থাপন করা যায়। প্রেজেন্টেশনের বেলায় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন তা নিচে উল্লেখ করা হল।
একটি স্লাইডে একটি পয়েন্ট
একটি স্লাইডে একটি পয়েন্ট আলোচনা করবেন। আপনি হয়তো কোনো একটি বিষয়ের মোট ১০টি পয়েন্টে কথা বলবেন। একটি স্লাইডে একের বেশি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করলে আলোচনা থেকে শ্রোতার মনোযোগ হারিয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের আলোচনার ক্ষেত্রে একটির বেশি স্লাইড ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে পর্যাপ্ত সময় আছে কি না এবং শ্রোতাদের জন্য তথ্যগুলো প্রাসঙ্গিক কি না। অপ্রাসঙ্গিক বিষয় স্লাইডে উল্লেখ করে সময় ও শ্রোতার মনোযোগ নষ্ট করা অনুচিত।
স্লাইডের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না
অনেকে প্রেজেন্টেশনের সময় স্লাইডের দিকেই তাকিয়ে থাকে। এতে শ্রোতা বিরক্ত বোধ করেন। মনে রাখতে হবে প্রেজেন্টেশন করছেন আপনিই, স্লাইড না। স্লাইড আপনার সহযোগী টুল মাত্র। শ্রোতারা আপনার কাছ থেকে বিষয়টি শুনতে এবং বুঝতে ইচ্ছুক। স্লাইড তাদের এই প্রক্রিয়া সহজ করতে পারে মাত্র। কিন্তু স্লাইড কখনই প্রেজেন্টারের বিকল্প নয়। তাই প্রেজেন্টেশনের সময় আপনার মনোযোগ স্লাইডের প্রতি নয়, শ্রোতার প্রতি নিবদ্ধ করুন।
একঘেয়ে করে ফেলবেন না
প্রেজেন্টেশনকে একঘেয়ে করে ফেলবেন না। স্লাইড, কথা, স্লাইড, কথা এই চক্রের পুনরাবৃত্তি শ্রোতার মনে বিরক্তি উৎপাদন করতে পারে। শ্রোতাকে প্রশ্ন করার বা তার মতামত প্রকাশের সুযোগ দিন।
ফন্ট সাইজ
আপনার লেখার ফন্ট সাইজ খুব বড় বা খুব ছোট করবেন না। শ্রোতামণ্ডলী সবাই যেন সহজেই স্লাইডের লেখা বুঝে পড়তে পারেন সেদিকে খেয়াল রেখে ফন্ট বাছাই করুন। সব স্লাইডের ফন্ট একই রাখার চেষ্টা করুন। ব্যাকগ্রাউন্ড ও ফন্টের কালার যেন মিলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। খুব গাঢ় রঙ এর ব্যাকগ্রাউন্ড বা উদ্ভট ফন্ট ব্যবহার করবেন না। বরং চখের আরাম হয় এমন রং বাছাই করুন।
নিজেকে শ্রোতার জায়গায় ভাবুন
প্রেজেন্টেশনের পূর্বে নিজে নিজে অনুশীলন করুন। বাচনভঙ্গি বা দেহভঙ্গি কেমন হবে তা নির্ধারণের জন্য কল্পনায় নিজেকে শ্রোতার জায়গায় বসান। আপনি একজন প্রেজেন্টারের কাছে কেমন প্রেজেন্টেশন প্রত্যাশা করেন তা বিবেচনায় রাখুন। প্রেজেন্টেশন তৈরি হয়ে গেলে টিমমেট, বন্ধু, সহকর্মী বা আয়নার সামনে একাধিকবার তা উপস্থাপন করুন। এর ফলে জড়তা কাটবে, কী বলতে চান তাও পরিষ্কার হবে আপনার কাছে।
এতক্ষণ তো জানলেন কী করা উচিৎ কী করা অনুচিত।
ইংরেজিতে একটি কথা আছে “If you cannot do great things, do small things in a great way”
তো এবার চলুন জেনে নিই প্রেজেন্টেশনের যেই পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনার প্রেজেন্টেশনকে স্মার্ট বলে গণ্য হবে।
প্রেজেন্টেশন দেবার ৬টি স্মার্ট পদ্ধতি
শুধু স্লাইড ভালো বানালেই হবে না। আপনার দর্শকদের সামনে সেই স্লাইডের উপর ভিত্তি করে প্রেজেন্টেশনটাও ঠিকঠাকভাবে দিতে হবে। প্রেজেন্টেশন দেবার স্মার্ট কিছু পদ্ধতি নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল।
১. গল্পের মাধ্যমে প্রেজেন্টেশন শুরু করা
গল্পের ভঙ্গিতে যদি প্রেজেন্টেশন শুরু হয় তবে কেমন হবে? ধরুন যে বিষয়ে আপনি প্রেজেন্টেশন দিচ্ছেন সে বিষয়ে দর্শক কিছুই জানে না। সেক্ষেত্রে গল্পের ভঙ্গিতে প্রেজেন্টেশন দিলে লোকে আপনার টপিক সহজে বুঝতে পারবে।
২. অনেক ইনফরমেশন দিবেন না
যে টপিকের উপর কথা বলছেন শুধু সেই টপিকের মধ্যেই আবদ্ধ রাখুন আপনার ইনফরমেশন। আশেপাশের আনুষঙ্গিক বিষয়ে বেশি ইনফরমেশন আনার কোনই যৌক্তিকতা নেই।
৩. দর্শকে মনোযোগ দিন স্লাইডে নয়
অনেককেই দেখা যায় স্লাইডের দিকে তাকিয়ে কেবল করে পড়ে চলেছে। এটা কখনোই উচিত না। এটা প্রেজেন্টেশন নয়। প্রেজেন্টেশন তখনই বলা হয় যখন স্লাইডের কম ইনফরমেশনকে দর্শককে বুঝিয়ে বর্ণনা করা হয়। তাদের সামনে প্রেক্ষাপট ধীরে ধীরে ব্যাখ্যা করতে হবে।
৪. হ্যান্ডআউট রেডি করে রাখুন
প্রেজেন্টেশনের সময় বিষয় কি কি বুঝিয়ে বলবেন সেটা একটা কাগজে লিখে নিন। কাগজে থাকবে প্রেজেন্টেশনের সব কন্টেন্টের নাম, গুরুত্বপূর্ণ শব্দ এবং লাইন। মনে না পড়লে দ্রুতই কাগজের দিকে মনে করে নিলেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন পুরোটা সময় দর্শকের দিকে তাকিয়ে বলার চেষ্টা করবেন।
৫. দর্শককে যুক্ত করুন আপনার বক্তব্যে
দর্শক হাসানোর জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু রসাত্মক কথা বলতে পারেন কিংবা করতে পারেন কোনো ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন । এতে দর্শক আপনার প্রেজেন্টেশনের সঙ্গে পুরোপুরি একাত্ম হয়ে যাবে।
৬. ড্রেস কোড এবং অন্যান্য প্রস্তুতি
আগে দর্শনধারী এরপর গুণবিচারী । প্রেজেন্টেশনের দিন ফর্মাল ড্রেস কোড মেনে পোষাক পরুন । সব প্রতিষ্ঠান বা ইন্সটিটিউটের জন্য এক না । তাই শিক্ষককে এই বিষয়ে আগেই জিজ্ঞেস করে নিন। প্রেজেন্টেশনের দিন কথা বলার জন্য কমপক্ষে ২ থেকে ৩ দিনের একটি প্রস্তুতি নিতে পারেন। প্রতিদিন কিছু পরিমাণে সময় দিলেই ভালো একটা প্রেজেন্টেশন এর জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন।
ক্লাসরুম বা অন্যত্র স্থানে প্রেজেন্টেশন দেবার আগে পেনড্রাইভ থেকে ফাইল কপি করে ল্যাপটপের ফোল্ডারে রাখুন। ল্যাপটপের চার্জ দেখে নিন। রুমের পেছন থেকে প্রজেক্টরে ফন্ট দেখা যাচ্ছে কিনা চেক করে নিন। এবং অবশ্যই সাউন্ড সিস্টেম চেক করুন। যদি সাউন্ড সিস্টেম না থাকে, তাহলে অবশ্যই উঁচু গলায় প্রেজেন্টেশন দেবার চেষ্টা করুন। যাতে পেছনের ব্যক্তিটিও স্পষ্টভাবে আপনার কথা শুনতে পারে। সুতরাং প্রেজেন্টেশন নিয়ে আর খামখেয়ালি নয়। দুর্দান্ত প্রেজেন্টেশনে মুগ্ধ করুন আপনার বন্ধু এবং সহকর্মীদের।