ISSB পরীক্ষা যেমন বছরজুড়েই বিভিন্ন সময় চলতে থাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীতে কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়া। সাধারণত বছরের জানুয়ারি ও জুন মাসে সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাডেট নির্বাচন শুরু হয়। সশস্ত্রবাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে আপনি যদি পেশা গড়তে চান, পার হতে হবে নির্বাচনের বেশ কয়েকটি ধাপ। বাহিনীভেদে নির্বাচন-প্রক্রিয়ার ধাপগুলো অনেকটা একই রকম। তবে তিনটির যেকোনোটির ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিতে আপনাকে অবশ্যই একটি অভিন্ন ধাপ পার করতে হবে। সেটি হলো আন্তবাহিনী নির্বাচন পর্ষদ (ISSB) কর্তৃক নির্বাচন। যা ISSB পরীক্ষা হিসেবে পরিচিত। আন্তবাহিনী নির্বাচন পর্যদের প্রেসিডেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মির্জা বাকের সারওয়ার আহমদ বলেন, স্বাধীনতার পর প্রতিটি বাহিনীর ক্যাডেট নির্বাচনের জন্য তাঁদের নিজস্ব নির্বাচন বোর্ড কাজ করত। কিন্তু প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় ১৯৭৬ সালে তিন বাহিনীর এসব বোর্ডকে সমন্বয় করে গঠন করা হয় একটি বোর্ড। সমন্বিত এ বোর্ডই হচ্ছে আন্তবাহিনী নির্বাচন পর্ষদ (বোর্ড)। তিনি জানান, এই বোর্ডের মূল দায়িত্বই হচ্ছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য উপযুক্ত ও যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই করে দেওয়া। ISSBর কাজের ধারা যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের জন্যই মানবসম্পদ নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে প্রস্তুত থাকতে হয় যেকোনো সময় নিজের জীবন উৎসর্গ করতে। তাই বিষয়টি প্রাধান্য পায় সদস্য নির্বাচনের সময়ই। বর্তমানে ISSBতে প্রার্থীদের যাচাই করা হয় ত্রিমাত্রিক নির্বাচন- পদ্ধতিতে। ত্রিমাত্রিক পদ্ধতিতে থাকে পরিবেশগত দিক, শারীরিক দিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশও ক্যাডেট নির্বাচনে ত্রিমাত্রিক পদ্ধতি। ব্যবহার করে থাকে বলে জানান সশস্ত্র বাহিনীর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। নির্বাচনের প্রক্রিয়া প্রতিটি বাহিনী আবেদনকারী প্রার্থীদের মধ্য থেকে নির্ধারিত বাছাই পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিতদের তালিকা পাঠায় ISSBতে। সাধারণত প্রতি গ্রীষ্মকালে তিনটি বাহিনী থেকে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ এবং শীতে প্রায় দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ প্রার্থীকে পাঠনো হয় ISSB নির্বাচনের জন্য। তাঁদের বিভিন্ন দিক থেকে দেখা হয় তাঁরা সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা হওয়ার কতটুকু যোগ্য। তবে ISSBতে প্রার্থীদের উত্তীর্ণের হার অনেক কম বলে জানা গেছে। কেননা প্রার্থী নির্বাচনে শূন্য পদকে বাদ দিয়ে বিবেচনায় রাখা হয় মানদণ্ডকে। নির্ধারিত মানদণ্ডে যাঁরা টিকেন, তাঁদের সবার জন্যই সুপারিশ করে ISSB। [video width="1920" height="1080" mp4="https://www.masteracademy.com.bd/wp-content/uploads/2024/11/ISSB-Preview.mp4"][/video] ঘরে বসে ISSB এর প্রস্তুতি নিতে এখনই এনরোল করুন Master Academy Bangladesh এর" “ISSB training A to Z” কোর্সে ISSB প্রার্থী নির্বাচনের জন্য প্রতি পর্বে গঠন করা হয় ২২ থেকে ২৪টি আলাদা বোর্ড। এই বোর্ডের নির্বাচক হিসেবে থাকেন অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত সামরিক কর্মকর্তারা। মনোবিজ্ঞানী, দল অভিক্ষা কর্মকর্তা (গ্রুপ টেস্টিং অফিসার) এবং প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি প্রেসিডেন্টরা ত্রিমাত্রিক কৌশলে প্রার্থীদের যাচাইবাছাই করেন। ISSB চার দিন মেয়াদি। তবে নিয়মিত কোর্স এবং অন্যান্য কোর্সের এই চার দিনের কার্যক্রমের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি কোর্স হচ্ছে নিয়মিত কোর্স। প্রথম দিন যেভাবে: নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক নির্বাচন ও লিখিত পরীক্ষার বৈতরণী পেরিয়ে যাঁরা ISSBতে যাবেন, তাঁদের প্রথম দিন সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে উপস্থিতি নিশ্চিত (রিপোর্ট) করতে হবে। এরপর তাঁদের নিয়ে একটি স্বাগত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চার দিনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়া হয়। বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা এবং চিত্র প্রত্যক্ষকরণ (পিকচার পারসেপশন) ও বর্ণনাকরণ পরীক্ষা সংক্ষেপে পিপিডিটির মাধ্যমে প্রথম দিনের সকালের কাজ শেষ। প্রথম দিনের বিকেলে ব্যক্তিত্ব অভিক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীর মনস্তাত্ত্বিক দিক দেখা হবে। বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা হয় বাচিক ও অবাচিক- এ দুই ধরনের প্রশ্নে। এমসিকিউ ধরনের ওএমআর প্রশ্নে হবে এ পরীক্ষা। থাকে নির্ধারিত সময় বরাদ্দ। ওই সময়ের মধ্যেই আপনার পরীক্ষা শেষ করতে হবে। অবাচিকে (ননভারবাল) নানা ছবি দিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তবে সবার পরীক্ষা হয় নির্ধারিত প্রশ্নে। একসঙ্গে সবার পরীক্ষা শুরুও হবে। যাঁরা ন্যূনতম পাস নম্বর পাবেন না, তাঁদের এখান থেকে বিদায় নিতে হবে। চিত্র প্রত্যক্ষকরণ ও বর্ণনাকরণ পরীক্ষা কেবল বুদ্ধিমত্তায় যারা টিকবে, তারাই পরবর্তী ধাপের চিত্র প্রত্যক্ষকরণ ও বর্ণনাকরণ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে বলে জানা যায়। এ পরীক্ষায় আংশিক অস্পষ্ট চিত্র প্রজেক্টরে দেখানো হবে। সেই ছবি দেখে প্রার্থীদের ইচ্ছেমতো গল্প লিখতে বলা হয়। পরে লেখা গল্প নিয়ে দলগত আলোচনা হবে এবং উপস্থিত থাকবেন নির্বাচকেরা। এ ধাপ থেকেও বাদ পড়বেন কিছু প্রার্থী। দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষা দ্বিতীয় দিনে সাত-আটজনকে নিয়ে আলাদা আলাদা দল গঠন করা হয়। নির্বাচক থাকবেন দল-নিরীক্ষা কর্মকর্তারা (জিটিও)। এ দিন পাঁচটি ধাপে পরীক্ষা হবে। আপনাকে মনে রাখতে হবে, এ পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার দলগত কাজের ক্ষমতা ও শারীরিক দক্ষতা যাচাই করা হবে। দলগত আলোচনা (গ্রুপ ডিসকাশন) পর্বে বাংলা ও ইংরেজিতে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর আলোচনা করতে হয়। প্রগ্রেসিভ গ্রুপ টাস্ক (পিজিটি) পর্বে একটি দলকে চারটি বাধা বা প্রতিবন্ধকতা পার করে এগিয়ে যেতে হয়। অর্ধ দলগত কাজ (এইচজিটি) গঠিত হয় তিন-চারজন প্রার্থীকে নিয়ে এবং একটি বাধা ডিঙিয়ে যেতে হয়। বাংলা ও ইংরেজিতে থাকে উপস্থিত বক্তৃতাও। সাধারণত সমসাময়িক বা চিরন্তন বিষয়াদির ওপরে আলোচনা করতে হয়। দ্বিতীয় দিনে ব্যক্তিগত প্রতিবন্ধকতা (আইও) অংশে একজন প্রার্থীকে একাকী আটটি শারীরিক পরীক্ষা দিতে হবে। দীর্ঘ লম্ফ, জিগজাগ, ওয়াল জাম্প, উচ্চ লম্ফ, বার্মা সেতু, টারজান সুইং, রশি আরোহণ, ঝুলন্ত কাঠের গুঁড়ি ইত্যাদি থাকে। এ দিনের সর্বশেষ কাজ হলো সাক্ষাৎকার। এখানে মূলত অনেকটা খোলামেলা কথা হয়। মুক্ত ও অবাধ এ সাক্ষাৎকারে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্যাদি, পরিবারের তথ্য, শিক্ষাগত বিষয় জানা হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ঘটনার বিশ্লেষণও করতে বলা হতে পারে। আর সাক্ষাৎকারে থাকবেন ডেপুটি প্রেসিডেন্টরা। তৃতীয় দিনের কথা দ্বিতীয় দিনে কাউকে বাদ দেওয়া হবে না। ফলে যাঁরা প্রথম দিনে টিকে যাবেন, তাঁরা বাকি তিন দিন থাকতে পারেন। পরিকল্পনাকরণ (প্লানিং এক্সসারসাইজ), নেতৃত্বকাজ (কমান্ড টাস্ক), সমঝোতা মূল্যায়ন (মিউচুয়াল অ্যাসেসমেন্ট) এবং বাকি প্রার্থীদের যাঁদের সাক্ষাৎকার হয়নি, তাঁদের সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দিনটি। প্লানিং এক্সসারসাইজে একটি গল্পের মধ্যে বেশ কিছু সমস্যা তুলে করা থাকে। প্রার্থীদের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করতে হয়। কমান্ড টাস্কে (সিটি) তিন-চারজনের গ্রুপের প্রত্যেক সদস্যকে নেতা বানানো হয়। দলনেতাকে তাঁর পুরো দল নিয়ে একটি বাধা নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করতে হবে। সমঝোতা মূল্যায়ন পর্বে প্রার্থীদের বিচারিক ক্ষমতা যাচাই করা হয়। এখানে একজন প্রার্থী তাঁর দলের অন্য প্রার্থীদের (নিজেকেসহ) সেরা তালিকা করতে বলা হয়। অবশিষ্ট প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তৃতীয় দিন শেষ হয়। শেষ দিন এদিন প্রার্থীকে আর তেমন কোনো কাজ করতে হয় না। নির্বাচকদের সবাই মিলে প্রত্যেক প্রার্থীর তিন দিনের কার্যক্রম পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা, বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়ন করে নির্বাচিত ও প্রত্যাখ্যাতদের তালিকা করে তা প্রেসিডেন্টের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠাবেন। ISSBর প্রেসিডেন্ট জানান, যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁদের দেওয়া হয় সবুজ কার্ড। আর প্রত্যাখ্যাতদের লাল কার্ড। সবুজ কার্ডের মেয়াদ থাকে এক বছর। তবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পাঁচ মাস এবং স্ক্রিন্ড আউটের চার মাসের মধ্যে ওই প্রার্থীকে আর ISSBতে ডাকা হবে না। যা সঙ্গে নেবেন ISSB র চার দিনের পুরো প্রস্তুতি নিয়ে আপনাকে যেতে হবে। সঙ্গে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে ভুলবেন না। শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদপত্র, ব্যবহার্য জিনিসপত্র, লেখার সরঞ্জাম (২বি পেনসিলসহ), জুতা ইত্যাদি অবশ্যই সঙ্গে নিতে হবে। পোশাক-আশাক দুই সেট নিয়ে গেলেই ভালো। যা কিছু নিষিদ্ধ আপনি সঙ্গে নিতে পারবেন না ক্যামেরা, অডিও/ভিডিও, ছুরি, মোবাইল ফোন, পোষা প্রাণী, নেশাজাতীয় দ্রব্য/পণ্য, আগ্নেয়াস্ত্র এবং সরকারের নিষিদ্ধ জিনিসপত্র। এর বাইরে আপনার মূল্যবান কোনো কিছু সঙ্গে নেওয়া ঠিক হবে না। শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না, এর সঙ্গে স্বপ্ন পূরণে হতে হবে আন্তরিক ও সচেষ্ট। [video width="1920" height="1080" mp4="https://www.masteracademy.com.bd/wp-content/uploads/2024/11/ISSB-ADS-1.mp4"][/video] বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনলাইন ISSB ট্রেনিং কোর্স নিয়ে এসেছে Master Academy Bangladesh। যেখানে ISSB পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য আপনাকে প্রিপেয়ার করবে Mohazer Mahbub Samee স্যার, যিনি দীর্ঘ দিন ISSB ট্রেইনার হিসেবে কাজ করে আসছেন এবং বর্তমানে ISSB গ্রিন কার্ড নিয়ে আছেন ট্রেনিংয়ে। কোর্সটিতে মোট ৮টি টপিকে ৪.৩০ ঘণ্টার ৪০+ লেসনের মাধ্যমে আপনাকে শেখানো হবে: 1️⃣ ISSB পরীক্ষা কী, কেন এবং কিভাবে দিবেন 2️⃣ সাইকোলজিক্যাল টেস্ট কীভাবে ভালো করবেন 3️⃣ পার্সোনাল গ্রুমিং গাইডলাইন 4️⃣ রিটেন টেস্টের ফুল প্রস্তুতি 5️⃣ ডিপি ভাইভার মোকাবেলা কিভাবে করবেন 6️⃣ গ্রুপ ডিসকাশন 7️⃣ ফাইনাল এসেসমেন্টসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তবে আর দেরি কেন? এখনই ISSB পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন এবং সবার থেকে এগিয়ে থাকুন! কোর্সটিতে এনরোল করতে এখানে ক্লিক করুন