ছবি আঁকা শিখতে চাই আমরা অনেকেই। সেজন্য আপনাকে খুব কঠিন করে কোমরবেধে নামার কিছু নেই। কিছু উপকরণ, আপনার ইচ্ছে আর দিকনির্দেশনা এই তিনটি বিষয়কে পুজি করে সহজেই আঁকতে পারেন ছবি। পুরো ব্যাপারটিই সহজভাবে বুঝতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।
আঁকা আঁকির প্রস্তুতি
কমবেশি সকলেরই ছবি আঁকার প্রতি এক ধরণের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। আঁকাআঁকি খুব জটিল বা কঠিন কিছুই নয়। আর জানেন তো শেখার কোনো বয়স নেই । ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় মনোবল দিয়েই আপনি যেকোনো কাজ দ্রুতই শিখে ফেলতে পারবেন। ছবি আঁকার মত একটি সৃজনশীল কাজের চর্চা আপনার কর্মস্পৃহা বাড়াতে পারে । তো ছবি আঁকা শুরু করাটা নিয়েই যত ভয়? শুরু করেই দিন না। শুরু করে দেয়া মানেই অর্ধেক কাজ কিন্তু শেষ।
হাতের কাছে কাগজ কলম থাকলেই শুরু করতে পারেন আঁকিবুঁকি । ঘরে থাকা পুরোনো খাতার পাতা কিংবা পড়ে থাকা কাগজ। মোদ্দাকথা একটা কাগজের টুকরো আর পেন্সিল থাকলেই প্রাথমিক প্রস্তুতি হয়ে যাবে। বাড়তি উপকরণ হিসেবে ইরেজার, ব্লেড, শার্পনার থাকলে তো ভালই। এ ধরণের প্রস্তুতির পর আপনার চাই ছবি আঁকা শুরু করে দেয়া। শুধু মনে মনে আঁকার ইচ্ছে থাকলেই দেখবেন যব জোগাড়যন্ত্র হয়েই গেছে।
স্ট্রেট লাইন প্র্যাকটিস
আপনি যত এক টানে সোজা লাইন তথা সরল রেখা এঁকে ফেলতে পারবেন তত সহজে আপনি ছবি আঁকার কাজটা শিখে ফেলতে পারবেন। এর জন্য একটাই পরামর্শ। প্র্যাকটিস, প্র্যাকটিস এবং প্র্যাকটিস। প্রাথমিকভাবে আপনি দুটো বিন্দুকে একত্রে জোড়া দিয়ে প্র্যাকটিস করতে পারেন। এ পদ্ধতিতে এগুলে সহজে ছবি আঁকার প্রাথমিক কাজটুকু অনেকখানি এগিয়ে যাবে।
তারপর ধরুন আপনি ভাবছেন যে সরল রেখা শিখে ফেললেই আপনি ধুপধাপ ছবি আকবেন আর সেটাই মনমতো হয়ে যাবে? তা নয় । এরজন্য কিছুটা পরিশ্রম আপনাকে করতে হবে।
হাতের কাছে যাই দেখবেন মন চাইলে এঁকে ফেলুন। হুবহু হতেই হবে এমন না। হয়তো হাতের কাছে থাকা চায়ের কাপ, কলমদানি কিংবা নাস্তার প্লেট বা বাল্ব। যা আঁকতে ভালো লাগে এঁকে ফেলুন।
আঁকাআঁকির মাপজোখ
আঁকার ক্ষেত্রে একটু মাপমতো বুঝেশুনে আঁকলে ভাল হয়। যেমন একটা বই এর পাশে কলম আঁকলে স্বাভাবিকভাবেই বইয়ের আঁকার কলমের চাইতে বড় হবেই। কিংবা ঘরের বেলায় ঘরের দরজা আর জানালার মাপ নিশ্চয়ই একই দেয়া উচিৎ না। দেখতে অসুন্দর লাগবে। কিছু বেসিক আইডিয়া টুকে রাখুন যেগুলো পরবর্তীতে ছবি আঁকার সময় কাজে দিবে।
আপনি দুই তিনবার বেশ আগ্রহের সাথে আঁকা আঁকি করলেন কিন্তু আপনি আপনার প্রশিক্ষক কিংবা অনলাইনে দেখা ভিডিওর মত হচ্ছে না বলে হতাশ হয়ে পড়ছেন? এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে আপনি বাঁধাধরা নিয়মে না এঁকে হাত খুলে আঁকুন। মনের মত দাগ কাটুন। একেবারে হুবহু আঁকতে গেলে অনেক সময় পৃষ্ঠা নষ্ট হবে । তাই হালকা করে পছন্দমত দাগ কেটে আঁকুন । আঁকতে থাকুন। একবার, দুইবার, তিনবার …চতুর্থবারের চেষ্টায় আপনি অবশ্যই পারবেন। আপনিও সামান্যতে হাল ছেড়ে দেবেন কেন?
আঁকতে গিয়ে ভুল করলে
এই যে কোথাও কোনো চমৎকার কিছু মনে দাগ কেটে থাকলো। মনে হল ছবি আঁকার খাতায় এঁকে ফেলি। আঁকতে লেগে গেলেন। কিন্তু আঁকার পর আঁতকে উঠলেন। আরে এতো ধারণার কাছাকাছিও যায় নি। ঘাবড়াবেন না। এই সমস্যায় সব বিখ্যাত শিল্পীরাও হরহামেশায় পড়েছে। আপনার কল্পনাশক্তি বাড়াতে আগে সেই বিষয়টির ছোট ছোট বিষয়গুলো খেয়াল করতে হবে।
যেমন আপনি যদি সূর্যাস্তের ছবি আঁকতে চান, আপনার মাথায় রাখতে হবে সূর্যাস্তের ছবিতে সূর্য পুরোপুরি দেখা যায় না, আকাশ পুরোপুরি আলোকিত থাকেনা আবার অন্ধাকারও নেই খুব একটা। আকাশ আর দিগন্তের এক সুন্দর সংযোগে সূর্যাস্তের অসাধারণ দৃশ্যের অবতারণা হয়। এসবকে মাথায় রেখে সুন্দর একটা ছবি এঁকেই ফেলুন। আর রেফারেন্সের ছবি তো ইন্টারনেটে সয়লাব। তো এঁকেই ফেলুন।
ছবির জন্য রঙ বাছাই
ছবি আঁকার ক্ষেত্রে আরেকটি অতি পরিচিত সমস্যা হল রঙ বাছাই করা। অনেকসময় দেখা যায় রঙ বাছাইয়ের ভুলের কারণে ছবির আবেদন কমে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়।
ছবি আঁকার পর রঙ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন।
১। আপনি গাছের রঙ সবুজ দিতেই হবে কেন? আপনি আঁকুন আপনার পছন্দসই রঙিন গাছ।
২। আর ধরুন একদম ঠিকঠাক রঙ দিতে চান । তাহলে নজর দিন ব্যাকগ্রাউন্ডের দিকে। গাঢ় রঙে হালকা এবং হালকা রঙে গাঢ় বস্তুত ফুটবে অনেক বেশি। আপনি যদি রাতের ছবি আঁকার জন্য কাল আকাশ এঁকে থাকেন, তাহলে বাড়ির খুটিনাটি বেশি রঙিন না করে হালকা হলুদ বা হালকা কমলা রঙের কিছু বাতি এঁকে দিলেই বেশ সুন্দর ফুটে উঠবে।
৩। মৌলিক রঙ তিনটি তো সবারই জানা। লাল, নীল, হলুদ। এদের একটির সাথে অপরটির সংমিশ্রণ করে নতুন রঙের উদ্ভব হয়। সবুজের সাথে লাল, কমলা, হলুদ যেমন মিশবে, তেমনি নীল, আকাশী বা ধূসর মিশবে না। প্রতিটা রঙের একটু করে ব্যবহার আপনি আগে করে দেখতে পারেন । বুঝে ওঠার জন্য কোনটা দেখতে কেমন লাগবে । আর আস্তে আস্তে রঙের মিশেল আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
অনুশীলনের বেলায় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন
১। ছবি আঁকার ক্ষেত্রে বেশি বেশি অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। ছবি আঁকার আগে ছবিকে ছোট ছোট বিন্দুতে ভাগ করে নিন। জিনিসটির আকার যত বাঁকা হবে বিন্দুর সংখ্যাও তত বেশি হবে।
২। যা দেখবেন তার খুঁটিনাটি লক্ষ্য করুন। ছায়া, আকার, পরিমাপ ঠিক করতে পারলে একটি ছবি অনেকাংশে পরিবর্তন করা সম্ভব।
৩। স্কেচ শেখাটাকে সবার আগে প্রাধান্য দিন। রঙ ব্যবহারের চেয়ে স্কেচ করা ছবিকে বাস্তবিক করা বেশি সহজ । ফলাফল নিয়ে না ভেবে স্কেচ করতে থাকুন।
৪। পরিমাপ করতে শিখুন। চারপাশে দেখা জিনিসগুলোতে কোন জিনিসটি বড় বা কোনটা তুলনামূলক ছোট সেসব খেয়াল করুন। পাতাটি ফুলের চাইতে কত ছোট কিংবা ডাল কতটা মোটা কিংবা চিকন সেসবে সূক্ষ্মভাবে নজর দিন। এসব আপনার স্কেচে প্রয়োগ করুন। দেখবেন বেশ কাজে দিচ্ছে।
৫। বিভিন্ন শেপ তথা আকৃতি আঁকুন নিয়মিত। বৃত্ত, ত্রিভুজ ,চতুর্ভুজ, কোণক, সরলরেখা, বক্ররেখা এসব আঁকুন। যা যা পারেন বা ছোটবেলায় যেগুলো সবচেয়ে বেশি একেছেন সেগুলোকেও গুরুত্ব দিন। মনে রাখবেন এসব আকৃতির সমন্বয়েই সুন্দর ছবির সৃষ্টি হয়।
৬। চেষ্টা ছাড়বেন না। পাশাপাশি দুইটি বৃত্ত আঁকলে যদি একই না হয় তবে হাল না ছেড়ে বারংবার আঁকুন। চেষ্টা করুন , মনকে শান্ত করার জন্য যতবার অনুশীলন দরকার তা করুন। একবার পেরে উঠলেই দেখবেন আর ভুল হচ্ছেনা।
৭। ছবি বাজে মনে হলে সেটি মুছে ফেলবেন না। সেটিকে রেখে দিন, এরপর নতু ন কাগজে আবার চর্চা করুন । এতে করে নিজের ক্রমশ উন্নতি আপনার চোখে পড়বে।
শেষের কথা
ছবি আঁকা একটি সৃজনশীল কাজ। এই সৃজনশীল কাজের যাত্রার জন্য আপনি প্রতিযোগিতা করবেন না। প্রতিযোগিতা করবেন নিজের সাথে। শিখুন নিজের মত করে । সময় দিন রোজ রোজ। অন্যদের কাজগুলো নিয়মিত দেখুন, কিভাবে কাজ করে, হাতটা ঘোরায়, কোন কৌশলে আঁকে , কিভাবে বিষয়বস্তুকে ফুটিয়ে তোলে সেটিতে চোখ রাখুন। আর হ্যাঁ
প্রচুর পরিমাণে চর্চা করুন, ভুল গুলোকে মেনে নিয়ে নতুন উদ্যমে চর্চা করুন।
আপনিও একদিন আঁকা-আকির জগতে হয়ে উঠতে পারেন অনন্য।